উপকূলীয় প্রতিনিধি:

মহেশখালীতে কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক যুবদল নেতা জিয়াউর রহমানকে পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন শহীদ তার পরিবার, এলাকাবাসী ও ছাত্রজনতা।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১১টার সময় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক শহীদ তানভীরের বড় ভাই জিয়াউর রহমান জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানান শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর স্বজন, এলাকাবাসী ও ছাত্র জনতা। এলাকাবাসী ও কলেজ শিক্ষার্থীরা উক্ত মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র আন্দোলনে শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি গড়ফাদার তারেক বিন ওসমান শরীফ মাস্টার মাইন্ড নোমান শরীফের ইন্ধনেই কোষ্টগার্ডকে ভূল তথ্য দিয়ে যুবদল নেতা ও তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জিয়াউর রহমান জিয়াকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।

মানববন্ধনে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর ফুফি খায়রুন্নেছা রুবি বলেন, যুবদল নেতা জিয়াকে গ্রেফতারের পেছনে ইন্ধন দিয়েছে শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি, ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্রলীগের (সন্ত্রাসী সংগঠন) সাবেক সহ-সভাপতি উসমান গণি। তার সে সময়ের রাজনৈতিক সহযোগী, বন্ধু ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের অনেকে বর্তমানে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত। সে এই মাফিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মী ও জুলাই অভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের নিধনের ঘৃন্য মিশনে নেমেছে। এই হত্যাকারী, কুচক্রী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে মহেশখালীর সাধারণ জনগণ ও সচেতন মহল। এছাড়াও আরেক আওয়ামী লীগের দোসর ও কক্সবাজার এল এ অফিসের দালাল এবং তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নোমান শরীফ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে আমার পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন।

এসময় তানভীর সিদ্দিকীর চাচা কামরুল হাসান রুবেল বলেন, ৫ ও ৬ই আগষ্ট বা তারও পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে মহেশখালী থানায় হামলা কিংবা পুলিশের অস্ত্র লুটের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কক্সবাজার মডেল থানা, ঈদগাও থানা এবং চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানায় উত্তেজিত জনতা হামলার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের সেই উত্তাল সময়ে জিয়া মহেশখালী অবস্থান করছিলেন। এমতাবস্থায় তার কাছে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের তথাকথিত দাবি কীভাবে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে!!

প্রশাসন যেভাবে তাকে একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করলো তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে তাহলে কেনো তিনি দুইটি অস্ত্র এবং তাজা বুলেট নিয়ে নিঃসংকোচে কেনো নিজের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন?
শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর দাদা মো. শফি বলেন, গতমাসে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর পরিবারকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের পক্ষ থেকে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। যা সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জিয়া। তার তত্ত্বাবধানে হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। তখন সেখানে প্রশাসনের লোকজন; বিশেষ করে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ, পুলিশ ও এবং স্থানীয় সচেতন নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন। তখন কারো মনে হলো না জিয়া একজন দুর্ধর্ষ ডাকাত! সেলুকাস!! পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার জেলার ডিসি মহোদয়ও শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ও তার সাথে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য ঘুণাক্ষরেও টের পাননি জিয়া ভয়ংকর ডাকাত!

আসলে জুলাই বিপ্লবের স্টেকহোল্ডারদের বিবৃত সতর্কবার্তাই সঠিক। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও দোসরদের অর্থনীতির খুঁটি অনেক শক্ত। তারা বিগত পনের বছর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জবরদখল, দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় তৈরি করেছে। তারা ইতোমধ্যে সেই টাকা দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এসকল খুনিরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জুলাইয়ের বিপ্লবীদের নিধনের মিশনে নেমেছে। প্রশাসনের নাকে৷ ডগায় বসেই তারা এসব অপকর্ম করছে।

শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর পিতা বাদশা মিয়া বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে আজকে প্রায় সাড়ে তিনমাস হতে চললো। শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার একজন আসামিকেও প্রশাসন গ্রেফতার করেনি। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, শহীদ তানভীর, আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ প্রায় দেড় হাজার শহীদের আত্মদান কি তবে ব্যর্থ হবে?
আমরা এটা হতে দিতে পারি না। প্রয়োজনে দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করবো।অবিলম্বে জুলাইয়ের হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর জিয়ার বিরুদ্ধে করা সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা-বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করে তাকে মুক্তি দিতে হবে।

শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচা মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাবেক ছাত্রদল নেতা রবিউল হাসান কর্ণেল, আরকান শাহরিয়ার, মো. কাজল, শ্রমিক দল নেতা সরওয়ার আলম, চট্টগ্রাম যুব ক্যাবের সভাপতি মো. আবু হানিফ, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির নেতা নিয়াজ উদ্দিন দিনার, সৈয়দ সোহরাব সাহল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল, হাজেরাতজু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী আফসানসহ অসংখ্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ জনগণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের দুটি চৌকস দল মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামে শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর বীর নিবাসে অভিযান চালিয়ে যুবদল নেতা জিয়ার রহমানসহ প্রবাসী মহি উদ্দিনকে আটক করে।

পরে পুলিশের লুট হওয়া একটি পিস্তল, একটি দেশীয় পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন এবং ২২ রাউন্ড গোলাসহ যুবদল নেতা জিয়াউর রহমান ও তার সঙ্গী মহিউদ্দিনকে আটক করেছে বলে কোস্ট গার্ড বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ঙঙখন্দকার মুনিফ তকি ব্রিফিং দেওয়ার পর রাতে মহেশখালী থানা থেকে প্রবাসী মহি উদ্দিনকে ছেড়ে দাওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি দিয়েছে।